Header Ads Widget

কেমন কাটলো ওদের ঈদ

তাহহিয়াতুল মৃদুল :  আব্বু নেই। তাকে ছাড়া প্রথম ঈদ করলাম। কোথাও ঘুরতে যাইনি। খাই নি সেমাই । সবাই তাদের আব্বুকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে আমার আব্বু নেই।
বুধবার (২৮জুন) সকালে এভাবে কথা গুলো বলছিল রংপুরের পীরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাদ্দাম হোসেনের (৩২) শিশু কন্যা শারমিন আক্তার সাথী (৭)। ওই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কলাবাগান কালিবাড়ি এলাকায় ট্রাক উল্টো দুর্ঘটনায়  ১৬ জন নিহত হয়। আহত হয় ৭ জন। নিহতদের প্রায় সবার বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। শুধু সাদ্দামের পরিবার নয়। পুরো এলাকায় চলছে শোকের মাতম। তাদের পরিবারের নেই ঈদ। নেই মুখে হাসি।
সাথী আরো বলেন,আম্মু কয়কদিন থেকে অসুস্থ তিনিও ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেন না। হাসেন না। তিনিও সড়ক র্দুঘটনায় আহত হয়েছেন।
সরেজমিনে চন্ত্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের পরিবারে ঈদের দিনেও কান্নার রোল। সেখানে একই পরিবারের সাদ্দাম হোসেন ও তার ছোট ভাই আলমগীর নিহত হয়েছেন। তারা কালীগঞ্জের লতাবর গ্রামের আইউব আলীর ছেলে। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন সাদ্দামের স্ত্রী শরিফা খাতুন ও আলমগীরের স্ত্রী খাদিজা বেগম। তারা সবাই গাজিপুরে ইন্টারম্যাক্স গার্মেন্টে চাকুরী করতেন। ঈদে সিমেন্ট বাহী একটি ট্রাকে করে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন তারা।
নিহতের মা জরিনা বেগম বলেন,গাড়িতে উঠার আগে ফোন করে ওই সময় কথা হয়েছিল ছেলে সাদ্দাম ও আলমগীরের সাথে। তখন আমাকে সাদ্দাম  বলে, সাথী’র জন্য ও আমার জন্য প্রায় ৮হাজার টাকা নতুন কাপড় কেনা হয়েছে।কিন্তু সেই বাবা আমার ফিরে এলো না। ফিরেছে তার লাশ। একসাথে দুই ছেলেকে হারিয়ে বুকফাঁটা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা জরিনা বেগম।
সড়ক র্দুঘটনায় উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামের দুই ভাই স্থানীয় চন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র আনোয়ার(২২) ও মহাসিন(১৯) এর বাবা-মা রাস্তার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন। কখন তাদের ছেলে ফিরে আসবেন।
এক সাথে দুই সন্তানকে হারানো শোকাতুর মা মঞ্জুআরা বেগমকে শান্তনা দেয়ার ভাষা যেন কারো নেই। এখনো  ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না। দুই সন্তান হারানো ঘটনায় পুরো গ্রামে বইছে শোকের মাতম। প্রতিবেশিরা তেমন ঈদে আনন্দ করতে পারেনি।
আনোয়ার ও মহাসিনের বাবা শাহজামাল বলেন, জন্মের পর থেকে তারা এক সাথে এক ঘরে ঘুমিয়েছে। এক সাথে স্কুল ও কলেজে ভর্তি হয়েছে। তারা আবার ঢাকায় চাকুরী করার সময়ও একসাথে ছিলো। সড়ক র্দুঘটনায় লাশ হয়ে ফিরে এসেও এক সাথে ঘুমালো।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ