এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাথরের সঙ্গে বিটুমিনের বদলে সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ‘পোড়া মবিল’। তবে লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম জাকিউর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিটুমিনের পরিমাণ কম ব্যবহার করায় কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
গত রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন নির্বাহী প্রকৌশলী। লাঞ্ছিত হন ‘ঠিকাদার’। পরে সড়কের কাজের বিষয়ে তিনজনকে কারণ দর্শাও (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট এলজিইডি সূত্র মতে, গত সেপ্টেম্বরে লালমনিরহাট এলজিইডি প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ‘বামনের বাসা থেকে খালেক মোকতারের বাড়ি’—এক কিলোমিটারের কাঁচা সড়কটি কার্পেটিংয়ের মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য দরপত্র ডাকে। কাজের দায়িত্ব পান কালীগঞ্জ উপজেলার ঠিকাদার আলমগীর হোসেন। কাজটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরকে। অক্টোবরে সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে কাগজে-কলমে আলমগীর হোসেন ঠিকাদার নিযুক্ত হলেও কাজটি করছিলেন স্থানীয় ঠিকাদার ও ইটভাটা ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম। তিনি আলমগীরের কাছ থেকে কাজটি কিনে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরু থেকেই সড়কটিতে অত্যন্ত নিম্নমানের খোয়া-বালু ব্যবহার করে কাজ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তোলে এলাকাবাসী। কিন্তু উল্টো ঠিকাদার স্থানীয়দের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি একজন কলেজ শিক্ষকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগ করেন আদিতমারী থানায়। তবে সেটি নথিভুক্ত হয়নি। একপর্যায়ে ‘নিম্নমানের খোয়া-বালু’ না সরানো পর্যন্ত কাজ করা যাবে না—এমন দাবি তুলে কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী। পরে এলজিইডি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই খোয়া-বালু সরিয়ে নেন ঠিকাদার। এ অবস্থায় কয়েক মাস বন্ধ ছিল কাজটি। সম্প্রতি পুনরায় কাজ শুরুর পর এবার নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগ তোলে এলাকাবাসী। তাদের মতে, দরপত্রে উল্লিখিত বাংলাদেশি বিটুমিনের পরিবর্তে গাইবান্ধা থেকে আনা পোড়া মবিলের সঙ্গে পাথর মেখে কার্পেটিং করা হয়। ফলে কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায়ই কার্পেটিং উঠে যেতে থাকে। এলাকাবাসী বিষয়টি এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে রবিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম জাকিউর রহমান।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, কাজ কিনে নেওয়া ঠিকাদার সহিদুল ইসলামসহ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ওই সড়কে গেলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার লোকজন। এ সময় তারা হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলতে থাকে। কার্পেটিং তুলতেই বেরিয়ে আসে নিচে থাকা খোয়া। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন প্রকৌশলী। আর সহিদুলকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, এমন দেখা গেছে একটি ভিডিওতে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, রাস্তার কাজের অনিয়মের কথা জানতে পেরে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ